তিলের জাত নির্বাচন :
মাটিঃ পানি জমে থাকে না এমন প্রায় সব ধরনের জমিতে তিলের চাষ করা যায় । উঁচু বেলে দোআঁশ বা দোআঁশ মাটি তিল চাষের জন্য উপযােগী ।
জমি তৈরী : তিল চাষের জন্য মাটি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে ভালভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হয় ।
বপনের সময় : খরিফ -১ মৌসুমে অর্থাৎ ফাল্গুন - চৈত্র মাসে ( মধ্য ফেব্রুয়ারী হতে মধ্য এপ্রিল ) তিলের বীজবপনের উত্তম সময় ।
বপন : বীজ সাধারনত ছিটিয়ে বােনা হয় । সারি করে বুনলে সার , সেচ ও নিড়ানি দিতে সুবিধা হয় । সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি রাখতে হবে এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৫ সেমি রাখতে হবে ।
বীজের হার : প্রতি হেক্টরে ৭.০-৭.৫ কেজি ।
সার ব্যবস্থাপনা :
তিলের জমিতে হেক্টর ( ২৪৭ শতক ) প্রতি সারের পরিমান :
সারের প্রয়ােগ পদ্ধতি : ইউরিয়া সার অর্ধেক ও বাকি অন্যান্য সার জমি শেষ চাষের সময় ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে । বাকি ইউরিয়া সার বীজবপনের ২৫-৩০ দিন পর ফুল আসার সময় উপরি প্রয়ােগ করতে হবে ।
সেচ প্রয়ােগ ও পানি নিস্কাশন : জমিতে রসের অভাব হলে বীজ বােনার ২৫-৩০ দিন পর ফুল আসার পূর্বে এক বার সেচের প্রয়ােজন হয় । জমিতে ধস না থাকলে বপনের ৫৫-৬০ দিন পর ফল ধরার সময় আর এক বার সেচ দেয়া যেতে পারে ।
তিলের ক্ষতিকর পােকামাকড় ও রােগবালাইয়ের সমম্বিত ব্যবস্থাপনা :
তিলের ক্ষতিকর পােকামাকড় ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনা :
তিলের হক মথ পােকার ক্ষতির ধরণঃ কীড়া তিল গাছের কচি পাতা , কান্ড , ফুল ও ফল পেটুকের মত খেয়ে মারাত্মক ক্ষতি করে । ফলে গাছ পাতা শূন্য হয়ে বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ফুল ধারণ বাধাগ্রস্ত হয় । এদের আক্রমণে তিলের শতকরা ২৫-৩০ ভাগ ফলন কমে যায় ।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা :
> সকালে ও বিকালে কীড়া হাত দ্বারা সংগ্রহ করে মেরে দমন করা যায় ।
> ক্ষেতে বিঘাপ্রতি ৮-১০টি কাঠি পুতে পাখি বসার সুযােগ করে দিলে শিকারী পাখি সবুজ রঙের কীড়া ধরে খায় ।
> মাটির নিচের পুত্তলী গভীর চাষের মাধ্যমে ধ্বংস করতে হবে ।
> আক্রমন খুব বেশি হলে নাইট্রো ( সাইপারমেথ্রিন + ক্লোরােপাইরিফস ) ৫০৫ ইসি ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত ক্ষেতে ১০ দিন অন্তর ২ বার ছিটিয়ে পােকা দমন করা যায় ।
তিলের বিছাপােকার ক্ষতির ধরণ : আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় ছােট ছােট কীড়া ১-২টি পাতা খেয়ে জালিকা সৃষ্টি করে । বয়স্ক কীড়াগুলি ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে এবং পাতা , কান্ড , ফুল ও ফল খেয়ে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতি করে । ফলে গাছের বৃদ্ধি , ফুল ও ফল ধারণ ব্যাহত হয় এবং ফলন শতকরা ২০-৩০ ভাগ কমে যায় ।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা :
> রাতে আলাের ফাঁদ দ্বারা মথকে আকৃষ্ট করে ধরে মারা যায় ।
> প্রাথমিক অবস্থায় দলবদ্ধ কীড়াসহ আক্রান্ত পাতা হাত দ্বারা ধ্বংস করে দমন করা যায় ।
> ৫০ গ্রাম আধাভাংগা নিম বীজ ১ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে ২ গ্রাম ডিটারজেন্ট মিশিয়ে ছেঁকে ১০ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করে পােকা দমন করা যায় ।
> আক্রমন খুব বেশী হলে নাইট্রো ( সাইপারমেথ্রিন + ক্লোরােপাইরিফস ) ৫০৫ ইসি ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত ক্ষেতে ১০ দিন অন্তর ২ বার ছিটিয়ে পােকা দমন করা যায় ।
তিলের পাতা মােড়ানাে ও ফলছিদ্রকারী পোকার সমন্বিত ব্যবস্থাপনা :
> মােড়ানাে পাতা ও আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে হাত দ্বারা কীড়া মেরে দমন করা যায় । প্রতি বিঘায় ৮-১০টি ডাল পুঁতে দিয়ে পােকাভােজী পাখি বসার ব্যবস্থা করে দেওয়া ।
> আক্রমণ খুব বেশী হলে পারফেকথিয়ন ৪০ ইসি ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত ক্ষেতে ১০ দিন অন্তর ২ বার ছিটিয়ে পােকা দমন করা যায় ।
তিলের রােগবালাইয়ের সমম্বিত ব্যবস্থাপনা :
তিলের পাতার দাগ রােগের লক্ষণ : এটি একটি ছত্রাক জনিত রােগ । এ রােগের আক্রমণে প্রথমে পাতার ছােট , গােলাকার , বাদামী থেকে গাঢ় বাদামী রঙের দাগ পড়ে । দাগ বিভিন্ন আকারের হয় এবং ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে ।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনাঃ
> এ রােগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ১ গ্রাম হারে ব্যাভিস্টিন প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর জমিতে ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে ।
> পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ফসলের চাষ করতে হবে ।
তিলের কান্ডপচা রােগের লক্ষণ : এটি একটি ছত্রাক জনিত রােগ । এ রােগের আক্রমণে গাছের কান্ডে , লম্বা , আঁকা , বাঁকা বিভিন্ন ধরনের গাঢ় খয়েরি ও কালচে দাগ দেখা যায় । এ দাগ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং সমস্ত কান্ডে ছড়িয়ে পড়ে । ব্যাপকভাবে আক্রান্ত গাছের পাতা মরে যায় ।
সমম্বিত ব্যবস্থাপনাঃ
> বীজবপনের পূর্বে ভিটাভেক্স -২০০ ছত্রাকনাশক দ্বারা ( ২-৩ গ্রাম / কেজি ) বীজ শােধনের মাধ্যমে রােগের আক্রমন কমানাে যায় ।
> এ রােগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ১ গ্রাম হারে ব্যাভিস্টিন বা ২ গ্রাম হারে ডাইথেন এম -৪৫ প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে ।
> ফসল কাটার পর গাছের শিকড় , আগাছা , আবর্জনা ইত্যাদি পুড়িয়ে ফেলতে হবে ।
> সাধারনত মাঝারী থেকে ভারী বর্ষণ এ রােগের আক্রমন হয়ে থাকে বিধায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখা দিলে বৃষ্টির কমপক্ষে ৬ ঘন্টা আগে ডাইথেন এম -৪৫ বা ইনডােফিল নামক ছত্রাক নাশক ০.২ % হারে স্প্রে করতে হবে ।
> গাছে ফুল আসার পূর্ব থেকে ১২-১৫ দিন পর পর ডাইথেন এম -৪৫ বা ইনডােফিল ( ০.২ % ) ৪-৫ বার স্প্রে করা হলে এ রােগের আক্রমন প্রতিরােধ করা যায় ।
ফসল সংগ্রহ : ফাল্লুন ( মধ্য - ফেব্রুয়ারী থেকে মধ্য - মার্চ ) মাসে ফসল সংগ্রহ করতে হয় । তিলের ফসল সংগ্রহ করতে ৮৫-৯০ দিন সময় লাগে ।
0 Comments