করলার আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি
জাত নির্বাচন : বারি করল -১ , বারি করলা -২ ও বারি করলা -৩ ।
মাটি:- সব রকম মাটিতেই উচ্ছে ও করলার চাষ হয় , তবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাযুক্ত দো - আঁশ ও এটেল দো - আঁশ মাটিতে ভালাে জন্মে।
জলবায়ু:- করলা উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর উপযােগী ফসল । শীতের দু'এক মাস বাদ দিলে বছরের যে কোন সময় বাংলাদেশে করলা জন্মানাে যায় ।
বপন সময়:- বারি করলা -১ ( টিয়া ) । বছরের যে কোন সময় চাষ সম্ভব হলেও এদেশে প্রধানত খরিফ মৌসুমেই চাষ হয়ে থাকে । ফেব্রুয়ারী থেকে মে মাসের মধ্যে যে কোন সময় করলার বীজ বােনা যেতে পারে ।
বপন পদ্ধতি: বসতবাড়ীতে করলার চাষ করতে হলে দু'একটি মাদায় বীজ বুনে গাছ বাউনির জন্য যথােপযুক্ত ব্যবস্থা করা যেতে পারে । করলার বীজ মাদায় অথবা সারিতে বােনা যেতে পারে । করলার জন্য ২.৫-৩ মিটার দুরত্বে মাদা তৈরি করা দরকার ।
বীজের হার:- করলা ও উচ্ছের জন্য হেক্টর প্রতি যথাক্রমে ৩ ও ৭.৫ কেজি বীজের প্রয়ােজন হয় ।
সারের মাত্রা ও প্রয়ােগ পদ্ধতি :- ( মাদা প্রতি )
গােবর :- ৭ কেজি , সবটুকু মাদা তৈরির সময় দিতে হবে ।
ইউরিয়া :- ১৩০ গ্রাম , চারা গজানাের ২০ দিন পর ৬৫ গ্রাম এবং বাকি ৬৫ গ্রাম প্রথম কিস্তির ২০ দিন পর উপরিপ্রয়ােগ করতে হবে ।
টিএসপি :- ১০০ গ্রাম , সবটুকু মাদা তৈরির সময় দিতে হবে ।
এমপি :- ৭৫ গ্রাম , মাদা তৈরির সময় ২৫ গ্রাম দিতে হবে । এরপর চারা গঁজানাের ২০ দিন পর ২৫ গ্রাম এবং বাকি ২৫ গ্রাম প্রথম কিস্তির ২০ দিন পর উপরি প্রয়ােগ করতে হবে ।
জিপসাম :- ৮০ গ্রাম , সবটুকু মাদা তৈরির সময় দিতে হবে । জিংক অক্সাইড ৪৪ গ্রাম , সবটুকু মাদা তৈরির সময় দিতে হবে ।
মাচা / বাউনি দেয়া :- বড় করলার জন্য বাউনী দেয়া অত্যাবশ্যক । বাউনী দিলে ফলন বেশি ও ফলের গুণমত মান ভাল হয় । সারিতে বীজ বপন করলে মাচার বদলে সারি বরাবর বেঙা তৈরি করা হতে পারে ।
করলার ক্ষতিকর পােকামাকড় ও রােগবালাই ব্যবস্থাপনা :
করলার ক্ষতিকর পােকামাকড় ও ব্যবস্থাপনা :
ফলের মাছি পােকার ক্ষতির ধরণ :
> মাছি পােকার আক্রমণে শতকরা ৫০-৭০ ভাগ করলা নষ্ট হতে পারে ।
> কচি ফলের উপরের খােসায় এ পােকা ডিম পাড়ে এবং ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফল খেয়ে নষ্ট করে ।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা :-
> আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে তা নষ্ট করে ফেলতে হবে ।
> পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ ।
> সেক্স ফেরােমন ফাঁদের ব্যবহার ।
> মাছি পােকা দমনের জন্য বিষ ফাঁদ ব্যবহার করা । ( ঢাকনাসহ স্বচ্ছ প্লাষ্টিক পাত্রে জানলা কেটে বা ছােট মাটির পাত্রে ১০০ গ্রাম থেতলানাে মিষ্টি কুমড়া কিছু পানিসহ বা চিটাগুড় এর সাথে ০.৫ গ্রাম ডিপটেরেক্স ৮০ এসপি বা ১৫ ফোটা যে কোন বালাইনাশক ব্যবহার করা )
> ২ মিলি সবিক্রণ বা সাইপামেথ্রিন ১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা ।
ইপিলাকনা বিটল / কাটালে পােকার ক্ষতির ধরণ :
> এ পােকা পাতার শিরাগুলাের মাঝের অংশ খেয়ে ফেলে ।
> মধ্যশিরা বাদে পাতার সমস্ত অংশ খেয়ে ঝাঁঝরা করে ফেলতে পারে ।
> ফলের উপরি ভাগের কিছু অংশ খেয়ে ফেলতে পারে অথবা ছােট ছিদ্র করতে পারে ।
> পূর্ণ বয়স্ক পােকা পাতা ও ফল খেয়ে ফেলে ।
> পােকাগুলাে কান্ড বা পাতার নিচে থাকে।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা :
> পােকাসহ আক্রান্ত পাতা হাতবাছাই করে মেরে ফেলা ।
> নিমতেল ৫ মিলি . + ৫ মিলি . ট্রিকস প্রতিলিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা ।
> এক কেজি আধাভাঙ্গা নিমবীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি স্প্রে করা ।
করলার রােগবালাই ব্যবস্থাপনা :
পাউডারী মিলডিউ রােগের লক্ষণ :
> পাতার উভয় পাশে প্রথমে সাদা সাদা পাউডার বা গুঁড়া দেখা যায় ।
> ধীরে ধীরে এ দাগগুলাে বড় হয় । ফলে গাছ বেশ দূর্বল হয়ে পড়ে , তাছাড়া দাগগুলাে বাদামি হয়ে শুকিয়ে যায় কোনাে একটি লতার পাতায় আক্রমণ বেশি হলে ধীরে ধীরে সেই লতা ও পরে পুরাে গাছই মরে যেতে পারে । এমনকি ফল ঝরে যেতে পারে ।
> যদি আগাম চাষ করা হয় তবে এ রোগের লক্ষণ বেশি দেখা যায় ।
> পাউডারী মিলডিউ রােগে পাতার উপরে সাদা সাদা পাউডার দেখা হয় যা পাতা নষ্ট করে দেয় ।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা :
> এ রােগের প্রতিকারের জন্য আক্রান্ত পাতা ও গাছ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে ।
> রােগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আগাছা বিনাশ করতে হবে ।
> জমির আশে - পাশে কুমড়া জাতীয় যে কোন সবজি চাষ থেকে বিরত থাকা ।
> আগাম চাষ করে রােগের প্রকোপ কমানাে যায় ।
> প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইনসাফ / থিওভিট / কুমুলাস অথবা ১০ গ্রাম ক্যালিক্সিন ১৫ দিন পর পর স্প্রে করে এ রােগ নিয়ন্ত্রণ করা ।
> টিন্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মিলি বা রনভিট -২ গ্রাম / প্রতি লিটার পানি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে ।
ফসল সংগ্রহ :- চারা গঁজানাের ৪০-৪৫ দিন পর করলা গাছে ফল দেখা যায় আর করলার বেলায় প্রায় ২ মাস সময় লেগে যায়। কচি ও অপুষ্ট অবস্থায় ২-৩ দিন পর পর ফল সংগ্রহ করতে হয় । আগাম জাতে বীজ লাগানাের একমাস পরই গাছে ফুল ধরা শুরু হয়।
ফলন :- করলার হেক্টর প্রতি ফলন ১০-১৫ টন ।
0 Comments